ফ্রান্সে ১০ বছর ধরে স্ত্রীকে অচেতন করে অন্য পুরুষ দিয়ে ধর্ষণের সেই ঘটনায় ডমিনিক পেলিকোতের সঙ্গে কারাদণ্ড হয়েছে আরও ৫০ জনের।ফ্রান্সে ১০ বছর ধরে স্ত্রীকে অচেতন করে অন্য পুরুষ দিয়ে ধর্ষণ করানোর সেই হতবাক করা ঘটনায় অপরাধী ডমিনিক পেলিকোতকে সর্বোচ্চ ২০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।ডমিনিক পেলিকোত ছিলেন ভুক্তভোগী জিজেল পেলিকোতের স্বামী। স্ত্রীকে মাদকদ্রব্য খাওয়ানো এবং অন্যদের দিয়ে ধর্ষণ করানোর জঘন্য অপরাধে আদালত বৃহস্পতিবার তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে।
ডমিনিকের সঙ্গে এ মামলায় অভিযুক্ত বাকি ৫০ পুরুষকেও এদিন দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। তাদের তিন থেকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে।ডমিনিক বাদে অন্য ৪৬ জন ধর্ষণের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন। দুইজন দোষী সাব্যস্ত হন ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে এবং যৌন নিপীড়নের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন দুইজন।ফ্রান্সের অবসরপ্রাপ্ত ৭২ বছর বয়সী ডমিনিক পেলিকোতের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি প্রথমে তার স্ত্রী জিজেল পেলিকোতকে মাদকের নেশায় অচেতন করতেন, এরপর অন্য পুরুষ দিয়ে তাকে ধর্ষণ করাতেন। ধর্ষণ করানোর জন্য অনলাইনে লোক খুঁজতেন ডমিনিক।
১০ বছর ধরে ৯২ বার এভাবে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন স্ত্রী জিজেল। ৭২ জন পুরুষ তাকে ধর্ষণ করেন। ঘটনাটি যেখানে ঘটেছে, সেই ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর অ্যাভিগনোনে গত সেপ্টেম্বর থেকে ডমিনিকের বিচার চলছিল।পরে এ মামলায় জিজেলকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত হন আরও ৫০ পুরুষ। তারা কেউ তরুণ, কেউ বৃদ্ধ, কেউ মোটা, কেউ পাতলা, কেউ কৃষ্ণাঙ্গ, কেউ বা শ্বেতাঙ্গ। তাদের মধ্যে কেউ দমকলকর্মী, কেউ গাড়িচালক, কেউ সেনা, কেউ বা নিরাপত্তারক্ষী, এমনকি একজন সাংবাদিক ও একজন বেকারও ছিলেন।
তাদের বেশির ভাগই আসেন জিজেল এর গ্রাম মাজানের ৫০ কিলোমিটারের মধ্যকার ছোট শহর ও গ্রাম থেকে। ডমিনিক পেলিকোত নিজে আদালতে তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ স্বীকার করেন এবং আদালতকে বলেন, তার সঙ্গে অভিযুক্ত ৫০ জনও দোষী।কৌসুঁলিরা ডমিনিকের ২০ বছর কারাদণ্ড চেয়েছিলেন। আদালতের পাঁচ বিচারকের প্যানেল সেই সাজারই আদেশ দিয়েছেন। তবে বাকীদের জন্য কৌসুঁলিরা যে সাজা চেয়েছিলেন, তার চেয়ে কম দিয়েছে আদালত। ৫০ জনের জন্য ৪ থেকে ১৮ বছরের কারাদণ্ড চেয়েছিলেন কৌঁসুলিরা।
বিবিসি জানায়, সাজার রায় হওয়ার পরই আদালতের বাইরে জিজেলের সমর্থনে জড়ো হওয়া মানুষজনকে উল্লাস করতে শোনা যায়। প্ল্যাকার্ড হাতে সেখানে উপস্থিত ছিলেন অনেক নারী। তাদেরকে স্লোগান দিতে দেখা যায়।আদালতের রায়ের পর সাংবাদিকদের সামনে কথা বলেন জিজেল। আদালত ও এর রায়কে সম্মান করেন বলে জানান তিনি। একই ধরনের ঘটনার শিকার আরও যারা হয়েছে এবং প্রায়ই যেসব ঘটনা জনসম্মুখে আসে না- সেইসব ভুক্তভোগীর উদ্দেশে জিজেল বলেন, “আমাদের সংগ্রামটা একই।” যাদের কাছ থেকে সমর্থন পেয়েছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদও জানান তিনি।